বেআইনী নির্মাণে মুখ ঢাকছে বর্ধমান ইতিহাসের স্মারক

স্টাফ রিপোর্টার, বর্ধমান: বেহিসাবী নির্মাণের রমরমা৷ তার জেরে ঢাকা পড়েছে কথিত ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মারক৷ এই ঘটনায় রীতিমত বিস্মিত বর্ধমান জেলার ইতিহাস গবেষকরা৷

রাজ্য সরকার গোটা রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে এক সুতোয় বাঁধার যখন উদ্যোগ নিয়েছেন, এমনকি প্রতিটি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামেও দর্শনীয় কোনো স্থান থাকলে সেগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন। সেই সময় খোদ ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ থাকা কুতুবউদ্দিন খান বনাম শের আফকান (কেউ কেউ বলেন আফগান) যুদ্ধের স্মারককেই অবহেলায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে৷

বর্ধমানের বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ড. সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, বর্ধমান জংশনের পাশে বর্তমানে যেখানে বর্ধমান ভবন রয়েছে, সেই জায়গায় দিল্লী থেকে এসে শের আফকান তাঁবু গেড়েছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে। সেই সময় বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন কুতুবউদ্দিন খান কোকালতাল চিশতি। একইসঙ্গে সেই সময় শের আফকান উদ্ধত ও বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন৷ তখন সম্রাট জাহাঙ্গীর কুতুবউদ্দিনকে বর্ধমানে পাঠান শের আফকানকে দিল্লীতে ফেরত পাঠানোর জন্য।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশ পেয়ে কুতুবউদ্দিন বর্তমানে বর্ধমান ভবন এবং জেলাশাসকের বর্তমান বাংলো এলাকায় তাঁবু গাড়েন। সেখানেই ডেকে পাঠানো হয় শের আফকানকে। ড. সর্বজিশ যশ জানিয়েছেন, ১৬০৭ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে অল্পসংখ্যক কিছু সৈন্য নিয়ে বর্ধমানে আসেন কুতুবুদ্দিন। সম্ভবত, শের আফকানকে বন্দি করার উদ্দেশ্য নিয়েই কুতুবউদ্দিন খান বর্ধমানে এসেছিলেন বলে মনে করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, মাথির উল উমরাতে পাওয়া যায় শের আফকান কুতুবউদ্দিনের দুরভিসন্ধির কথা আগাম টের পেয়েছিলেন। কিন্তু কুতুবউদ্দিন শের আফকানকে পত্র মারফত জানান, তিনি দেখা করতে আসলেও তাঁর কোনো ভয়ের কারণ নেই।

আর সেই অভয়পত্র পাওয়ার পরই শের আফকান কুতুবউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর তাঁবুতে হাজির হন। শের আফকানকে তাঁবুতে রেখে কুতুবউদ্দিনের সৈন্যরা বেরিয়ে যান। সেই সময় কুতুবউদ্দিন তাঁর দুই অনুচরকে নিয়ে আচমকাই শের আফকানকে আক্রমণ করেন। পালাবার উপায় না থাকায় কুতুবউদ্দিনের আক্রমণ প্রতিহত করেন শের আফকান এবং এখানেই কুতুবউদ্দিনকে খুন করেন তিনি৷

ঘটনা জানাজানি হতেই কুতুবউদ্দিনের সেনাপতি অম্বা খাঁ কাশ্মীরি আক্রমণ চালায় শের আফকানের ওপর। দ্বৈতযুদ্ধে দুজনেই নিহত হন। বর্ধমানের পীরবাহারামে কুতুবউদ্দিন এবং শের আফকানের সমাধি রয়েছে। যদিও কুতুবউদ্দিনের দেহ দিল্লীতে নিয়ে চলে যাওয়া হয়।

ড. সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, ইতিহাসের এই ঘটনার নির্দশন হিসাবে বর্তমান বর্ধমান ভবন এলাকাতেই দুটি স্মারকস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। যার একটি সামনে থাকলেও অন্য স্মারকটিকে সম্পূর্ণ আড়াল করে তার সামনে একটি ঘর তৈরী করা হয়েছে।

এই ঘটনাকে ইতিহাসের অপমান বলে মনে করেছেন ইতিহাসবিদরা। সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, প্রশাসনের উচিত গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। এব্যাপারে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী জানিয়েছেন, বর্ধমান ভবনের এলাকাটি জেলা পরিষদের অধীনে। এব্যাপারে জেলা পরিষদকে জানানো হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হবে।

অন্যদিকে, এব্যাপারে জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এই বর্ধমান ভবনের একদিকেই রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতির বাংলো। বর্তমানে সেখানেই থাকেন সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু। তিনি জানিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই গোটা বিষয়টিকে দেখা হবে। প্রয়োজনে ওই স্মারককে সামনে বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।

The post বেআইনী নির্মাণে মুখ ঢাকছে বর্ধমান ইতিহাসের স্মারক appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.



Bengali News via Kolkata News

Comments

Popular posts from this blog

news links 18

new link 7

new links 3