মোদী সরকারের সেই দশ বড় ঘোষণা, যার ফলে বদলে গেলো গোটা ভারতের ছবি

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন মোদী সরকার অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করতে চলেছে ১লা ফেব্রুয়ারী। এই বাজেটকে কেন্দ্র করে সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা তুঙ্গে। ইতিপূর্বে মোদী সরকার মোট পাঁচটি বাজেট পেশ করেছে, ২০১৪তে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলী এই সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলি ছিল জনধন যোজনা, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, নমামী গঙ্গে এবং মুদ্রা যোজনার মত একাধিক যোজনা যা সর্বাঙ্গিকভাবে স্বতন্ত্র ছিল পূর্ব সরকারের থেকে, এবং যার সুফল দেশের অন্ত্যজ শ্রেণীর জন সাধারণের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।

১) আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পঃ এই প্রকল্পকে মোদী সরকার তাদের সবথেকে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলির একটি বলে দাবি করছে, কারণ এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের পঞ্চাশ কোটি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা সুরক্ষা দেওয়া হবে, যা আজ অবধি পৃথিবীর সবথেকে বড় বীমা যোজনা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবর্ষে চালু হওয়া এই মহতী প্রকল্পে ১৩০০ গুরুতর রোগের চিকিৎসার খরচ বিনামূল্যে করানোর সুযোগ পাবে দেশের দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ।

২০১৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যার লাভ ইতিমধ্যেই ভারতের ৬ লক্ষ মানুষ নিতে পেরেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO)-এর ডিরেক্টর জেনারেল এই প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন,ও মোদী সরকারকে অভিনন্দন জানান। সাম্প্রতিক মাইক্রোসফট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বিল গেট্স-ও এই প্রকল্পের প্রশংসা করেন।

২) সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনাঃ ২০১৫ সালে চালু হওয়া কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও” যোজনার অন্তর্গত, যাতে কোনো ব্যক্তি তার ১০ বা তার থেকে কম বয়সের কন্যার জন্য “সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা” অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে, যার মধ্যে বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যেতে পারে, এর ওপর সরকার ৮.৫% সুদ দেবে এবং এই সুদ থেকে আয়ের ওপর সরকার কোনোরূপ ট্যাক্স ধার্য করবেনা। অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি জানান, নভেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত সারা দেশে এই প্রকল্পে মোট ১.২৬ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে যাতে ১৯,১৮৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

৩) উজ্জ্বলা যোজনাঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১লা মে ২০১৬ তে দরিদ্র মহিলাদের বিনামূল্যে এলপিজি গ্যাস কানেকশান দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারা দেশে ৬ কোটি গ্যাস কানেকশান বিতরণ করা হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী জানান এই প্রকল্পটি মহিলাদের পরিষ্কার ও ধোঁয়ামুক্ত রান্নাঘর প্রদান করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়।

তিনি আরো জানান এই উজ্জ্বলা যোজনাটি নারী সশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্পের লাভ পেতে হলে গ্রাহককে কেবলমাত্র একটি আবেদনপত্র পূরণ করে তার নিকটবর্তী এলপিজি বিতরণ কেন্দ্রে জমা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীমন্ডল ৮০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির অনুমতি প্রদান করে। প্রথমে এই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ২০১৯ এর মার্চ পর্যন্ত ৫ কোটি রাখা হয়ে থাকলেও তা ৬ কোটি লক্ষ্য পূরণ করে ফেলে, অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাওয়ার দরুন এর লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সাল পর্যন্ত ৮ কোটি করে দেওয়া হয়েছে।

৪) অটল পেনশন যোজনাঃ কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য উপযোগী।মোদী সরকার এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করে ২০১৫ এর মে মাসে, যাতে ১৮ থেকে ৪০ বছরের যেকোনো ব্যক্তি যদি এই প্রকল্পে মাত্র ২১০টাকা মাসিক বিনিয়োগ করে তবে বিনিয়োগকারী তার ৬০ বছর বয়স থেকে নূন্যতম ১০০০ থেকে সর্বাধিক ৫০০০ টাকা পেনশন পেতে পারে।

৫) প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনাঃ মোদী সরকারের সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রকল্পগুলির মধ্যে এটি, কারণ এই মহতী প্রকল্পটির লাভ দেশের দরিদ্র জনগণ সরাসরি পেয়েছে। ১৫ই আগস্ট ২০১৪ তে মোদী সরকার এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে যার উদ্দেশ্য ছিল দেশের একেবারে দরিদ্র জনগণ যারা বেশিরভাগ সরকারি প্রকল্প থেকে এতদিন অজ্ঞাত থাকতো তাদের ব্যাঙ্কিং সুবিধা প্রদান করে তাদের বিভিন্ন সরকারি যোজনাগুলির লাভ সরাসরি পাইয়ে দেওয়া। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৩২ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই প্রকল্পে শুধু শূন্য ব্যালেন্স একাউন্ট খোলা যায় তাই নয়, ১০০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের ব্যবস্থাও আছে।

৬) উজালা যোজনাঃ  ভারতের মত দরিদ্র দেশে অন্ধকারদূরীকরণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে, পাশাপাশি জনবিস্ফোরণের কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যার সমাধান স্বরূপ কেন্দ্র সরকার উজালা প্রকল্পের সূচনা করে। এই প্রকল্পে মোদী সরকার জন সাধারণকে সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে LED বাল্ব ও টিউব ব্যবহার শুরু করার আবেদন জানায়, কারণ এই LED বাল্ব ও টিউব সাধারণ বাল্ব ও টিউবের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, শুধু তাই নয় LED বাল্ব ও টিউব সাধারণ বাল্ব ও টিউবের থেকে বেশি উজ্জ্বল আলো প্রদান করে।

এই প্রকল্পে সরকার সস্তায় LED বাতি বিক্রয় করা শুরু করে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে মে ২০১৮ অবধি দেশে মোট ২৯,৯৬,৩৫,৪৭৭টি LED বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। অন্য একটি প্রকল্প ‘দীন দয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা” তে মে ২০১৮ পর্যন্ত দেশের ১৮,৩৭৪টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছান হয় যেখানে এতদিন বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।

৭) মুদ্রা যোজনাঃ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যার দরুণ বেরোজগারি একটি প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার মুদ্রা যোজনার সূচনা করে এপ্রিল ২০১৮তে, যার ফলে যুবক যুবতীদের কম সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় যাতে তারা ব্যবসা আরম্ভ করে স্বনির্ভরশীল হতে পারে। এই প্রকল্পে মোট তিনটি ক্যাটেগরি রাখা হয়েছে, যথা শিশু, কিশোর ও তরুণ, যার মধ্যে ৫০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ ঋণ প্রদানের সুবিধা আছে।

প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার জন্য তৈরী ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে ২৩শে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত সরকারি ২৮১৪৪ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গতবছর স্বয়ং লালকেল্লা থেকে ঘোষণা করেছিলেন মুদ্রা যোজনায় তখন পর্যন্ত ১৩ কোটি ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

৮) নমামী গঙ্গে যোজনাঃ ২০১৪ সালে কেন্দ্রে সরকার গঠনের পরেই প্রধানমন্ত্রী গঙ্গা পরিশ্রুত ও সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রক গঠন করেন যার নাম ‘গঙ্গা মন্ত্রক।” এই মন্ত্রকের অধীনেই ‘নমামি গঙ্গে যোজনা”-টির শুভসূচনা করা হয় ৭ই জুলাই ২০১৬তে হরিদ্বার ও বারাণসী থেকে একসঙ্গে। এই প্রকল্পে পাঁচ বছরে মোট ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র সরকার। গঙ্গা মন্ত্রকের দায়িত্ব পালনকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি জানান এই প্রকল্পের ফলে গঙ্গা ৭০% পরিশ্রুত হয়ে গেছে এবং ২০২০ পর্যন্ত গঙ্গার জল পানের যোগ্য হয়ে যাবে।

৯) স্বচ্ছ ভারত যোজনাঃ অপরিষ্কার হওয়ার জন্যেই ভারতীয়রা একাধিক অসুখের শিকার হয়ে থাকে, এই সমস্যা দূর করতেই কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২ অক্টবর,২০১৪ এই উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্পটির সূচনা করেন। তিনি এই প্রকল্পের সূচনা করে দেশের আপামর জনগণের কাছে আবেদন করেন ‘এক স্বচ্ছ ভারত” নাম জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় #MyCleanIndia ক্যাম্পেন চালানোর আবেদন করেন।

এই যোজনার সূচনাকালে তিনি বলেন গান্ধীজি দেশকে স্বাধীন করে গেছেন কিন্তু দেশকে পরিষ্কার করার তার সেই স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। তাই তিনি ২ অক্টবর ২০১৯ পর্যন্ত স্বচ্ছ ভারতের প্রকল্পে ১.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন সারা দেশে ১.২ কোটি শৌচালয় নির্মাণের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেন, ২০১৪ সালে দেশে ৩৮ শতাংশ মানুষের কাছে শৌচালয় পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাওয়ায় সেই লক্ষ্য ৯৮% তে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

১০) প্রধানমন্ত্রী জনসুরক্ষা যোজনাঃ সাধারণ মানুষকেও জীবন বীমার সুবিধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে মোদী সরকার এই প্রকল্পের সূচনা করে ৯ই মে ২০১৫ সালে। এই প্রকল্পে যেকোনো ব্যক্তি প্রতি বছর মাত্র ৩৩০টাকা দিয়ে ২লক্ষ টাকার বীমা সুরক্ষার সুবিধা পাবেন, অর্থাৎ এই প্রকল্পের খাতা ধারকের যদি আকস্মিক মৃত্যু হয় তাহলে তার নিকট আত্মীয় ২লক্ষ টাকার বীমা রাশি পাবে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে মে ২০১৮ পর্যন্ত দেশের মোট ১৯ কোটি ব্যক্তি এই প্রকল্পে খাতা খুলেছে।



from Express News http://bit.ly/2sZGXL3

Comments

Popular posts from this blog

news links 18

new link 7

new links 3